রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ
নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম:
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হলেন পাবনা সুজানগর উপজেলার কৃতিসন্তান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ। শুক্রবার সকালে রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ পাবনা সুজানগর উপজেলা মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের মৃত, মোকছেদ আলী মাস্টারের বড় ছেলে। শুক্রবার বাদ আছর তার নিজ গ্রামের বাড়ির উলাট মাদরাসা মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদানের পরে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হবে বলে প্রশাসনিক ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
তার মৃত্যুর বিষয় নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. এম. এস. এ সবুর জানান, দেশের এই কৃতি সন্তান রক্তনালীর এক বিরল রোগে ভুগছিলেন। তার সুস্থ্যতার জন্য সার্জারীর মাধ্যমে গত ১১ মে রাজধানীর শ্যামলী স্পেশালাইজড হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর ২টি পা কাটা হয়। তবু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এছাড়াও তিনি এ্যজমা, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
সহযোদ্ধা পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সন্টু বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ ভাই খুব সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তার সাহসিকতায় কয়েকটি স্থানে যুদ্ধের সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। সাতবাড়ীয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করতে আসা পাকিস্তানী সেনাদের উপর আক্রমণ চালানোর অন্যতম নায়ক ছিলেন সাঈদ ভাই। সেদিন শত্রুরা পরাজিত হয়েছিলো। ১১ই ডিসেম্বর সুজানগর থানা শক্রমুক্ত করতে গিয়ে চোখের কোনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মূল্যবান দুটি চোখ হারান তিনি। দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে হয়তো আমরা অনেক মানুষ একত্রিত হতে পারবো না। তবে খুব কষ্টো পেয়েছি তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতির এই বীর সন্তান সমাহিত হবে এটাই সবচাইতে বড় প্রাপ্তি।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহামুদ জানান, জাতির এই বীর সন্তানের মৃত্যু সংবাদ আমি সকালেই পেয়েছি। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন কাজ সম্পুর্ন হবে। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুজানগর উপজেলা আসিফ আনান সিদ্দিকীকে উপর দেয়া হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। জেলা প্রশাসন এই বীর সন্তানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ ১৯৭১ সালের ১১ই ডিসেম্বর পাবনার সুজানগর থানা শক্রমুক্ত করতে গিয়ে চোখের কোনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। তিনি ৭নং সেক্টরে সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি প্রথম শ্রেণির ভাতা প্রাপ্ত একজন যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী কতিৃক ঢাকা কলেজ গেট সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে জে-৬ একটি ফ্লাট বরাদ্ধ পেয়েছেন। যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ সুজানগর সাতবাড়ীয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বেলতলিতে ট্রেনিং শেষে ২ দেশে ফিরে নিজ এলাকায় অন্যদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ এফ. এফ. গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তার ব্যাচ নং এফ. এফ. নং- ভারতীয় ৩৫৮৭৯, চাকুলিয়া নং-৫১১৮।
কোন মন্তব্য নেই